শহিদুল ইসলাম
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে দুই হাজারের অধিক ঝুপড়ি পুড়ে ছাই হয়েগেছে।সাড়ে তিন ঘন্টা পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণ আসে।এখনো পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।তবে জড়িত থাকার সন্দেহে একজন আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।আটককৃত ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি স্হানীয় প্রশাসন।রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরের থাকা এনজিও সংস্থার পরিচালনাধীন লানিং সেন্টার,হাসপাতাল ও অন্যান্য স্হাপন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে কক্সবাজার -টেকনাফ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে দিক বিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।অসংখ্য রোহিঙ্গা নর-নারী খোলা আকাশের মানবেতর জীবনযাপন করছে।রবিবার সন্ধ্যা৬টা১৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছেন বলে ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার স্টেশনের উপ সহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা।
এনজিও সংস্থা শেড এর উপ পরিচালক জিয়াউর রহমান বলেন তাদের একটি স্হাপনা পুড়ে ছাই গেছে।গন উন্নয়ন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিমলা দে বলেন তাদের একটি উইমেন সেন্টার পুড়ে ছাই গেছে। রবিবার (৫ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্পের বি ব্লকের একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন মূহূর্তের মধ্যে ৯, ১০, ১২ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে।এ ঘটনার খবর পেয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন ঘটনাস্থলে পৌছেছেন।সেখানে পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণে জন্য র্য্যাব,পুলিশ,সেনাবাহিনীও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।
কক্সবাজার ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো: মিজানুর রহমান বলেন এনজিও গুলোকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে।আগুনে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা পরিবার গুলোকে উখিয়ার কুতুপালং এর ট্রানজিট সেন্টার ও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থা তাদের খাদ্য সরবরাহ করছে সোমবার থেকে তাদের বাসস্থানের জন্য আসবাবপত্র বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন ১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করা হয়েছে। এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট সিআইসি অফিসও।স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতাদের ধারণা, অগ্নিকাণ্ডটি পরিকল্পিত হতে পারে। কয়েক দিন ধরে রোহিঙ্গাদের মাঝে গুঞ্জন ছিল নাশকতার আগুন ধরানো হতে পারে। এর আগেও একাধিকবার নাশকতার আগুনে পুড়েছিল বালুখালীর একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প। বেশ কয়েকদিন ধরে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসও’র মাঝে গোলাগুলি-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা হতাহত হয়েছেন। এর জেরে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে উচ্ছেদ করতে শিবিরে আগুন দিতে পারে।বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জি-ব্লকের বাসিন্দা নুর জাহান বলেন,আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে।কোন রকম বেঁচে আসলাম।তার পাশে বসে থাকা গোল মেহের বলেন কিভাবে আগুন লেগেছে বলতে পারছি না।দুপুরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের বাসিন্দা নজু মিয়া বলেন এখানে শান্তি নেই।প্রতিদিন গোলাগুলি হয়।আজ আবারো আগুনে পুড়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাখানেক মধ্যে কক্সবাজার শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান,পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।এ ব্যাপারে শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন,রাতে এনজিও সংস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরন করা হবে।কি পরিমান ঝুপড়ি পুড়ে গেছে বলা যাচ্ছে না।তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন দুই হাজারের অধিক ঝুপড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।এখন পর্যন্ত কোন হতাহত হয়নি।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ পর্যন্ত দুই হাজারের কাছাকাছি ঘর পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিশ্চিত করে বলতে সময় লাগবে। এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।’
অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় দুই হাজারের মতো ঘর পুড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের
(সিনিয়র সহকারী সচিব) সরওয়ার কামাল জানান, “প্রায় দুই ঘণ্টা পর শিবিরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখছি। তালিকা তৈরির কাজ শুরু করছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে।”
ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলি বলেন “আগুনে পুড়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখানে ঘরের পাশাপাশি বেশ কিছু দোকানপাটও ছিল। এসব ক্যাম্পে বারবার আগুন লাগার পেছনে রহস্য রয়েছে। সে রহস্য জানা কঠিন। আর ক্যাম্পে আগুন লাগাও থামে না।”তবে আজকের একটা স্হানে দুষ্কৃতকারীরা সরাসরি আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে এরকম ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
৮ এবিপিএনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, বিকেল ৩টার দিকে হঠাৎ করে আগুন দেখা যায়। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ক্যাম্পের ঘরগুলো পাশাপাশি হওয়ায় আগুন ১২, ১১, ১০ ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়েছে। আগুনের সূত্রপাত কী কারণে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সন্দেহজনক এক যুবককে আটক করেছে এপিবিএন ও পুলিশ। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন “আগুনে প্রায় দুই হাজার ঘরবাড়ির পুড়ে যাওয়ায় ১২ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। তাদের আমরা বিভিন্ন সেন্টার ও মসজিদে নিয়ে যাচ্ছি। আর আগুন লাগার কারণ বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।”
একই ক্যাম্পে ২০২১ সালের ২২ মার্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ১১ জন প্রাণ হারান, আহত হন পাঁচ শতাধিক। পুড়ে যায় ৯ হাজারের বেশি ঘর।