ডেস্ক রিপোর্ট
বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপপু। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আজ রোববার তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আজ সকালে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপপুর নাম দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন—এটি নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া যায়। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে।
সদস্যও নেই। বিরোধী দল হলেও অতীত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বড় নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে জাতীয় পার্টি। ফলে আওয়ামী লীগ বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত ব্যক্তিই যে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন, তা একেবারেই নিশ্চিত। তবে দলটি এখন পর্যন্ত তাদের প্রার্থী কে, তা প্রকাশ করেনি। আজ আওয়ামী লীগ তাদের মানোনীত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করবে।
এর আগে গত বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠক করেছিল আওয়ামী লীগ। সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনীত করার ক্ষমতা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়। ওই বৈঠকের পর দলীয় সূত্র বলেছিল, দলীয় প্রার্থী কে হবেন তা ১২ ফেব্রুয়ারির আগে প্রকাশ করার সম্ভাবনা কম। সে দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভানেত্রী প্রতিনিধি দলকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত ব্যক্তির নাম জানাবেন। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ওই নাম ঘোষণা করবেন। এরপর গণভবন থেকে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ইসিতে গিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। রাষ্ট্রপতির মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে থাকবেন ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
এদিক নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও অফিস করেছেন ইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। মনোনয়নের ফরম তোলা ও জমাদানের জন্য এ বিভাগ খোলা ছিল। তবে বিকেল পর্যন্ত কোনো ফরম সংগ্রহ বা জমা হয়নি বলে নিশ্চিত করে সূত্রটি। সূত্র আরও জানায়, অন্য প্রায় সব নির্বাচনেই জামানতের নিয়ম থাকলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কোনো জামানত নেই। ফলে এ নির্বাচনের জন্য কোনো ব্যাংক থেকে পে-অর্ডার/ ড্রাফট হয়েছে বলেও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনে মনোনয়নপত্র দাখিল সম্পর্কে বলা আছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নির্ধারিত দিনে ও সময়ের মধ্যে কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে ওই পদের জন্য মনোনীত করে নির্বাচনী কর্তার কাছে একটি মনোনয়নপত্র দিতে পারবেন, যে মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে তার স্বাক্ষর থাকবে এবং সমর্থক হিসেবে অন্য একজন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর থাকবে; সেইসঙ্গে যিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত হতে যাচ্ছেন, তারও ওই মনোনয়নে সম্মতিসূচক স্বাক্ষরিত বিবৃতি থাকবে। তবে প্রস্তাবক বা সমর্থক হিসেবে কোনো সংসদ সদস্য একটির বেশি মনোনয়নপত্র সই করবেন না।
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের তারিখ। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের কাউকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা নেই। এর বাইরে অন্য কোনো প্রার্থীও এখন পর্যন্ত নেই। একক প্রার্থী হলে শেষ পর্যন্ত আর ভোটের প্রয়োজন হবে না। এর আগে ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফেরার পর থেকে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে ভোটের প্রয়োজন পড়েছিল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তপশিল অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। আইন অনুয়ায়ী, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।