নিজস্ব প্রতিবেদক
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরসা ও আরএসও’র মধ্যে সংঘাতের জেরে শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আগামী রবিবার থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইসিআরসি) ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের সমন্বয়ে পরিচালিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে (বুধবার পর্যন্ত) সংঘাতের পর তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে তাঁবু টাঙিয়ে মোট ২ হাজার ৯৭০ জন রোহিঙ্গা অবস্থান নেওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ’র খবর পড়তে ফলো করুন
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের গণনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওখানে ৫৫৮টি পরিবারের ২ হাজার ৯৭০ জন রোহিঙ্গা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওখানে আশ্রয়রত মোট রোহিঙ্গার দুই-তৃতীয়াংশ বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিত। শুধু এক-তৃতীয়াংশের নিবন্ধন পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, এদের রবিবার সকাল থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। শুরুতেই বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিতদের স্ব স্ব ক্যাম্পে পাঠানো হবে। নিবন্ধিত ক্যাম্পে পরিবারভিত্তিক ঘর বরাদ্দ থাকার কথা। ওই ঘরে তাদের পাঠানো হবে। আর অনিবন্ধিতদের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে।
মোহাম্মদ মিজানুজ্জামান চৌধুরী জানান, সংশ্লিষ্টদের তথ্য বলছে ওখানে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত বেশকিছু রোহিঙ্গা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় মামলা রয়েছে। এদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছেন। মূলত কক্সবাজার, বান্দরবান জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধিসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটি এ কাজ করছেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসাসহ অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্পে। ওইসব ক্যাম্পের সার্বিক দেখভাল ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে আরআরআরসি (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার)।
অপরদিকে তুমব্রু কোনারপাড়া শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির দায়িত্ব পালন করছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি)। ক্যাম্পটিতে ৬৩০টি পরিবারে সাড়ে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছিল।
গত ১৮ জানুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন।
এ সময় শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বসতঘর পুড়ে যায়। এরপর তুমব্রু বাজারে তাঁবু টাঙিয়ে আশ্রয় নেন তারা। বর্তমানে ওখানে ২৯৭০ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেলেও বাকিরা কোথায় তা বলতে পারছেন না কেউ।