সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর পীর ছাহেব মরহুম হাফেজ আবদুল হাই (রাহঃ) এর আজ ২৩ জানুয়ারী ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী। এ উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় দু’দিনব্যাপী বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিল ও তরিকত সম্মেলন গতকাল ২২ জানুয়ারী (রবিবার) শুরু হয়ে ২৩ জানুয়ারী (সোমবার) সকালে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে বলে
আয়োজকদের সুত্রে জানা গেছে।
শাহ আবদুল হাই রাহঃ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহ মাওলানা এসএম আনোয়ার হোসাইন মাহফিল ও ত্বরিকত সম্মেলনে ভক্ত অনুরক্ত ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
পীরে কামেল, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হাফেজ আবদুল হাই (রহঃ) এর ইছালে ছওয়াব মাহফিল ও ত্বরিকত সম্মেলনে হাজার হাজার মুরিদান, ভক্ত-অনুরক্ত রবিবার দুপুর থেকে মাহফিলে আসতে শুরু করেছেন। এ মাহফিলে লক্ষাধিক মানুষের জন্য খাবার (তবরুক) ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার সম্পুর্ন ব্যয় ভার নেন স্থানীয় ও দুর-দুরান্ত থেকে আগত ভক্ত-অনুরক্ত এবং মাহফিল বাস্তবায়ন পরিষদ।
শাহ মাওলানা হাফেজ আবদুল হাই রাহঃ ফাউন্ডেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবার খুটাখালী উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে গতকাল রবিবার বাদ জোহর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় ইছালে ছওয়াব মাহফিল।
মঙ্গলবার বাদে ফজর খুটাখালী দরবারের পীর সাহেবজাদা আলহাজ্ব মাওলানা নুর হোছাইন মাহফিলে আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন।
হাফেজ আবদুল হাই রাহঃ ফাউন্ডেশনের সাবলীল ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন জেলার লোকজনের সার্বিক সহযোগিতায় মাহফিলের কার্যক্রম
শুরু হয়েছে। মাহফিলে দেশের নামকরা বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম, আলেম ওলামা মাহফিলে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন।
এক নজরে পীর ছাহেব হাফেজ শাহ আবদুল হাই রাহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী————————————
পীরে কামেল হাফেজ শাহ আবদুল হাই ১৯৪৮ সালের ২২ জানুয়ারী (জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে) চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙ্গিয়া রঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা হাফেজ আবদুল জব্বার (রাহঃ) এবং আম্মাজান মরহুমা হাফেজা খাতুন সাহেবা (রাহঃ) পরিবারের ৬ পুত্র ১ কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন ৫ম পুত্র।
তাঁর পরিবারের সবাই ছিলেন সৎ ও ধার্মিক। জম্মসুত্রে তিনি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙ্গিয়া রঙ্গিপাড়ায় হলেও ১৯৭২ সালের দিকে তিনি সপরিবারে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে দারুল হুফফাজ হাফেজখানা-এতিমখানা-মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে সুদীর্ঘকাল দ্বীনের প্রচার-প্রসারের পর স্থায়ীভাবে ৪৫ বছর ধরে ইউনিয়নের গর্জনতলী গ্রামে শাহ মঞ্জিলে
বসবাস করে আসছিলেন।
উপজেলার খুটাখালী দারুল হুফ্ফাজ হফেজখানা ও এতিমখানার বার্ষিক মাহফিলে তিনি মুসলমানদের নানা সমস্য নিয়ে ও আর্থিক উন্নতির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করতেন এবং শেষ রাতে জিকির, তাহাজ্জুদে অংশ নিতেন।
ফজর নামাযের পূর্বে লাটি ভর দিয়ে উপস্থিত হাজার হাজার মুসলিমদের উদ্দেশ্যে তাহাজ্জুদ নামাযের গুরুত্ব বর্ণনা করতেন এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিতেন।
বাদে ফজর ভক্ত অনুরক্তকে সাথে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ মোনাজাত করেন গারাঙ্গিয়া দরবার শরীফের খলিফায়ে আজম, ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার অপরিসীম দায়িত্ব পালনকারী পীর মুর্শিদ আলহাজ্ব হাফেজ শাহ মাওলানা আবদুল হাই (রাহঃ)।
মরহুম হুজুরের প্রতিষ্টানের নামানুসারে খুটাখালী ইউনিয়নের হাফেজখানা সড়ক নামকরণ করা হয়।
মহাসড়কের লাগোয়া ঐ সড়কের সম্মুখে করা হয়েছে সুদৃশ্য হাফেজখানা গেইট।
ছাত্র জীবনে আবদুল হাই কৃতিত্বের সাথে কোরআন হাফেজ-দাখিলে উত্তীর্ণ হয়ে গারাঙ্গিয়ার দরবার শরিফের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা বড় হুজুর ও ছোট হুজুর (রাহঃ) এর ছোহবত লাভ করেন।
খুটাখালীতে আসার পূর্বে তিনি একটানা ১২ বছর চকরিয়া উপজেলার কাকারা হাফেজখানা-এতিমখানা ও মসজিদের দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সৎপথ প্রদর্শন করে অসংখ্য হিন্দুকে নওমুসলিম করেন।
গারাঙ্গিয়ার বড় হুজুর কেবলার নির্দেশে তিনি খুটাখালীতে দারুল হুফফাজ হাফেজখানা-এতিমখানা প্রতিষ্টা করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এবং খুটাখালী তমিজিয়া ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসার গর্ভনিং বডির সাবেক সহ-সভাপতিসহ একাধিক প্রতিষ্টানের দায়িত্বরত ছিলেন।
এছাড়াও তিনি র্দীঘ সময় পর্যন্ত গারাঙ্গিয়ার বড় হুজুর পীর মুর্শিদের সার্বক্ষনিক তত্ববধানে ছিলেন। পীর মুর্শিদের মনোন্নয়নক্রমে তিনি গারাঙ্গিয়া দরবারের খলিফা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
এখানে বলা বাহুল্য যে বড় হুজুর কেবলা (রহঃ) এর সাথে হাফেজ আবদুল হাই (রহঃ) এর পারিবারিক আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেও রক্তের কোন সম্পর্ক ছিলনা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেড় শতাধিক মসজিদ, হাফেজখানা-এতিমখানা ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
মরহুম পীর সাহেব কেবলা সর্বশেষ বিগত ২০১৬ সালে হজ্ব পালন করে শারিরীক অসুস্থতার কারনে আর যেতে পারেনি। ব্যক্তি জীবনে ১৬ বার হজ্ব পালন করেন তিনি।
পীর ছাহেব কেবলা সকলকে কাঁদিয়ে মাহবুুবের ডাকে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ ভক্ত অনুরক্তকে সুখ সাগরে ভাসিয়ে এতিম, অসহায়, দুস্থ মানবতার সেবক ও আধ্যাত্মিক সাধক খুটাখালীর পরম শ্রদ্ধেয় পীর মুর্শিদ আলহাজ্ব হাফেজ শাহ আবদুল হাই গত ২২ জানুয়ারী ২০১৮ ইং সোমবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। পরদিন ২৩ জানুয়ারী খুটাখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের জানাযা শেষে পীরবাড়ির জামে মসজিদের পূর্বপাশে দাফন করা হয়েছে। বিশাল এ জানাযায় জন সমুদ্রে পরিনত হয়।